Friday, October 12, 2018

গরিবের ভালোবাসা


– দুপুরে খেয়েছো?
– নাহ, রান্না হচ্ছে। একটু পর খাবো।
– ৩ টা বাজে এখন। কখন তোমার রান্না শেষ হবে আর কখন তুমি খাবে।
– হয়ে যাবে। তুমি খেয়েছো?
– তোমার খাওয়ার আগে আমি কখনো খাই?
– আজ খেয়ে নাও। আমার লেট হবে।  অঙ্কুশ ফোন রেখে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। শরীর চলছেনা আর। গত রাত থেকে এখনো পেটে কোন খাবার যায়নি।
বাসায় রান্না হয়নি।
মেসের রুমমেটরা দুপুরে কেউ বাসায় খায়না।
সবাই অফিসে চলে যায়। বাজার হয়নি সকালে।
পকেটেও কোন টাকা নেই।
এই মেসে অঙ্কুশই কেবল একমাত্র বেকার মানুষ।
 সারাদিন বই পড়ে।
এই গল্প টল্প পড়ে অথবা দু একটা কবিতার বই।
বাসা থেকে মাসে ৩০০০ হাজার টাকা আসে।
বাবা নেই, মা বাসায় বসে সেলাই টেলাই এর কাজ করে যা উপার্জন করে, তা দিয়ে সংসারটাকে টেনেটুনে নিয়ে যাওয়াই কঠিন হয়ে যায়।
তারপরও সেই কষ্টের টাকা থেকে, এই টাকাটা তাকে পাঠাতে হয়।
  যদিও ৩০০০ টাকার মধ্যে ২০০০ টাকা চলে যায় সিট ভাড়াতে আর বাকি ১০০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা মেসের বুয়ার বিল।
মেসে থাকতে হলে ওয়াইফাই এর বিল ১০০ টাকা দেওয়া বাধ্যতামূলক! যদিও অঙ্কুশ এর এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন অথবা ল্যাপটপ কিছুই নেই, তবুও দিতে হয়।
জগতের যে কত নিয়ম ফলো করে টিকে থাকতে হয়! ক্ষুধায় অঙ্কুশের শরীর দুমড়ে মুচরে যাচ্ছে।
পেটের ভেতর গ্যাস বুদবুদ শব্দ করে ফেপে উঠছে।
পেট ফুলে গেছে, অথচ পেটে কোন খাবার যায়না প্রায় ২৮ ঘন্টা! গলির মোড়ের যে চায়ের দোকানটা, সেখানে ২৩৫ টাকা বাকি জমেছে।
কলা রুটি খেয়ে কাটিয়ে দেওয়া যেত, কিন্তু যাওয়ারই তো সুযোগ নেই।
অনুরিমা আবার ফোন দিয়েছে।
– খাওয়া হলো তোমার?
 – হ্যা হয়েছে।
খুব ক্ষুধার্ত ছিলাম, গুনে গুনে ২ প্লেট ভাত খেয়েছি।
 তুমি খাওনি এখনো?
 – নাহ, এখন খেতে যাবো।
খেয়ে এসে তোমাকে কল দিচ্ছি।
– আচ্ছা খেয়ে নাও।
 অনুরিমা ফোন কেটে দিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে কান্না করছে।
সে জানে, অঙ্কুশ এখনো কিছু খায়নি।
প্রিয় মানুষের কন্ঠস্বর শুনলে তার না বলা কথাও বুঝা যায়।
অনুরিমার সামনে ভাতের থালায় খাবার পড়ে আছে।
কাছের মানুষ না খেয়ে আছে জানার পর কি করে গলা দিয়ে খাবার নামে? অনুরিমা তার খাবারগুলো একটা বক্সে ভরে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।
 অঙ্কুশের বাসার গেটে এসে তাকে ফোন দিয়ে নিচে নামতে বললো।
 অঙ্কুশ নিচে নেমে দেখে অনুরিমা দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে একটা টিফিন বক্স।
 সামনে আসতেই অনুরিমা বক্সটা অঙ্কুশের হাতে দিয়ে বললো, আজ শোল মাছের ভর্তা আর শিং মাছের ঝোলটা ভালো হয়েছে। আমি একা একা খাবো, এটা মানতে পারছিলাম না।
তুমি তো দুপুরে খেয়েছো, এটা রাতে খেও।
আর উপরে যেয়ে ফ্রেস হয়ে বের হও।
পাক্কা ১০ মিনিট সময় আছে তোমার হাতে।
 ১ মিনিটও যাতে লেট হয়না।
ব্যাচেলর মেসে থাকা ছেলেদের রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হতে ২ মিনিট লাগে।
 এর আগেও অনুরিমা কখনো ২ মিনিটের বেশি সময় দেয়নি।
 আজ ১০ মিনিট সময় দিয়েছে। অঙ্কুশ বুঝতে পারছে, এটা আসলে তার ভাত খাওয়ার সময়। সে ভাত খেয়ে নিচে নেমে দেখে অনুরিমা গেটের পাশে নেই।
অঙ্কুশ তাকে খুঁজতে খুঁজতে অনেকদূর চলে এসেছে।
কোথাও অনুকে দেখা যাচ্ছেনা।
সে অনুর ফোনে কল দিতে যেয়ে দেখলো ব্যালেন্স নেই।
ব্যাচেলর মেসে থাকা দরিদ্র পরিবারের ছেলেদের ফোনে সবসময় ব্যালেন্স থাকে না।

•লেখকঃ আসরাফুল ইসলাম
©কপিরাইট

মিচকে শয়তান

Author & Editor

মিচকে_শয়তান এর মানে এই না যে আমি খারাপ আমি মিচকে শয়তান হলাম এর জন্যই যে আমি ভালো কাজ গুলা করি গোপনে আর খারাপ কাজ করি সবার সামনে এর জন্যই আমার নাম হলো মিচকে_শয়তান আমার সম্পর্কে আরো জানতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন : http://www.facebook.com/asraful.islamctg1/.

1 comments: